User:মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম রাহান
বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন: একটি অজানা বাস্তবতা
লেখক: মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম রাহান
বাংলাদেশে সাধারণত নারী নির্যাতনের বিষয়টি বেশি আলোচিত হয়, কিন্তু পুরুষদের প্রতি নির্যাতনও একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অবহেলিত বিষয়। পুরুষদের যন্ত্রণা, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের কারণে যে সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষতি হয়, তা অনেক সময় অজ্ঞাত থেকে যায়।
শারীরিক নির্যাতন
পুরুষেরা যদি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হন, তবে সেটি বেশিরভাগ সময় গোপন থাকে। সমাজে পুরুষদের জন্য ‘শক্ত’ বা ‘সহনশীল’ হওয়া একটি বড় চাপ, যার ফলে তারা নির্যাতন সহ্য করে চুপচাপ। পরিবারের মধ্যে বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুরুষদের শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তবে সেটি খুব কমই প্রকাশিত হয়।
মানসিক নির্যাতন
অধিকাংশ পুরুষ মানসিক নির্যাতন থেকে গুরুতর মানসিক সমস্যায় ভোগেন, কিন্তু এটি কখনোই খোলামেলা আলোচনায় আসে না। সম্পর্কের মধ্যে অবিশ্বাস, অপমান এবং অযথা অভিযোগ পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। তাদের ওপর চাপ থাকে প্রমাণ করার যে তারা পরিবারের প্রধান বা সমর্থক হিসেবে যথেষ্ট ভালো। এই মানসিক চাপ পুরুষদের জীবনে হতাশা, বিষাদ এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি করতে পারে।
আইনগত সমস্যায় পড়া
কখনও কখনও পুরুষরা ভুল বা মিথ্যা অভিযোগের শিকার হন, যেমন মিথ্যা পারিবারিক নির্যাতন বা যৌন হয়রানি। এসব ক্ষেত্রে তাদের সামাজিক মর্যাদা ও মানসিক অবস্থা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও আইনে পুরুষদের অধিকার রয়েছে, তবে সমাজে পুরুষদের নির্যাতন বিষয়টি প্রায়ই অবহেলিত থাকে।
সামাজিক প্রভাব
সমাজে পুরুষদের জন্য নির্যাতনের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায় না। পুরুষদের মনোভাব থাকে যে, তারা কখনোই দুর্বল হতে পারে না। তাদের দুর্বলতা বা যন্ত্রণা প্রকাশ করলে সেটা অনেক সময় শারীরিকভাবে বা মানসিকভাবে ‘অবমাননা’ হিসেবে দেখা হয়। ফলে, অনেক পুরুষ নির্যাতন সহ্য করতে করতে একাকী হয়ে পড়েন, নিজের কষ্টের সঙ্গে একাই লড়াই করেন।
পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টি যে পরিমাণ গুরুত্ব পেতে উচিত, তা এখনও অনেকাংশে অনুধাবিত হয়নি। আমাদের সমাজে পুরুষদের দুর্বলতার প্রতি যে অভ্যস্ত ধারণা রয়েছে, তা ভাঙা প্রয়োজন। পুরুষদের প্রতি নির্যাতনও সমান গুরুত্বে আলোচিত হতে হবে, এবং নির্যাতিত পুরুষদের জন্য সহায়তা, আইনগত নিরাপত্তা এবং সামাজিক সহানুভূতির সুযোগ তৈরি করতে হবে।