Wn/bn/সুদানে তীব্র খাদ্য সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ
রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে ৬ লাখেরও বেশি মানুষ চরম খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। দেশটিতে বর্তমানে সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর মাঝে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ না হলে এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করা না হলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক জানিয়েছেন, দেশটির পাঁচটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে, যার মধ্যে উত্তর দারফুরের জামজাম শরণার্থী শিবিরও রয়েছে। উপরন্তু, সংঘর্ষের কারণে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং ডকটরস উইথআউট বর্ডারসসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ায় দেশটির পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে টার্ক বলেন, সুদান এখন সংকটের এক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, দুর্ভিক্ষ আরও পাঁচটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ১৭টি এলাকাউচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেন।
তিনি দেশটির নেতাদের প্রতি যুদ্ধ বন্ধ করার, জরুরি সহায়তা দেওয়ার এবং কৃষি উৎপাদন পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানান।
মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা এমএসএফ গত সোমবারে জামজামে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। উল্লেখ্য জামজামে প্রায় ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বুধবার, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী-ও তাদের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে, কারণ এখন সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে।
কার্যক্রম বন্ধ করার আগে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী জামজামে প্রায় ৩ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিত। কিন্তু বারবার হামলার ঘটনা ঘটায় চলতি মাসে তারা মাত্র ৬০ হাজার মানুষকে সহায়তা করতে পেরেছে। একটি হামলায় শিবিরের প্রধান বাজার ধ্বংস হয়ে গেছে।
জাতিসংঘের হিউম্যানিটারিয়ান অপারেশনসের পরিচালক এডেম ওসর্নু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জানিয়েছেন যে, সাম্প্রতিক কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে জামজাম এবং তার আশপাশে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
জামজাম শিবিরটি উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার (৬.৫ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। আরএসএফ বাহিনী কয়েক মাস ধরে শহরটি দখলের চেষ্টা করছে।
সুদানের সেনাপ্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং সাবেক উপপ্রধান ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো-এর মাঝে সংঘর্ষ থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিলে দেশটিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শুরু হয়। এ পর্যন্ত এতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১ কোটিরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই দেশটির ভেতরে কিংবা বাইরে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
টার্ক সতর্ক করেছেন যে, আরএসএফ যদি বিভিম্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যায় তাহলে সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। তিনি জানান, সুদানে বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি ৪ লাখ মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মাত্র ৩০ শতাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে বিভিন্ন রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
হোয়াইট নাইল রাজ্যে কলেরা ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে। সেভ দ্য চিলড্রেন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ রোগে ইতোমধ্যে অন্তত ৭০ জন মারা গেছে এবং ২২০০ জনের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। একটি ড্রোন হামলায় কোস্টি শহরের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হলে নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যাহত হয়। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
গত বছরের আগস্ট থেকে সুদানে ৫৫ হাজারের বেশি কলেরা রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং ১৪০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সুদানের শিশুরা সহিংসতা, রোগ এবং অনাহারের এক দুষ্টচক্রের মধ্যে আটকে আছে বলে জানিয়েছেন সুদানে নিয়োজিত সেভ দ্য চিলড্রেন-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদিলাদিফ।
- "Sudan facing ‘the abyss’ unless war ends as mass starvation looms, UN warns" — আল জাজিরা, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। (ইংরেজি)
- "Sudan facing ‘abyss’ unless war ends: UN" — আরব নিউজ, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। (ইংরেজি)