Wn/bn/সড়ক উন্নয়নে ২০০০ কোটি টাকার সুকুক বন্ড ছাড়বে বাংলাদেশ সরকার
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
রাজশাহী বিভাগে একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ষষ্ঠবারের মতো সুকুক বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। এই বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।
বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির শরিয়াহ্ অ্যাডভাইজরি কমিটির প্রথম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ।
বৈঠকের পর কমিটির একজন বলেন, "আগ্রহী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান এই শরীয়াহ-সম্মত বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।"
তিনি আরও জানান, কমিটি সাত বছর মেয়াদে ‘ইস্তিসনা’ ও ‘ইজারা’ – এই উভয় অর্থায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে এই সুকুক বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই অর্থ ব্যবহার করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ‘রাজশাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামীণ এলাকায় সড়ক যোগাযোগের উন্নতি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার ৬৫টি উপজেলায় গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগের উন্নতি হবে। এর ফলে সেখানে নাগরিক সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তাঁরা আরও জানান, সরকার এর আগে সারাদেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ ধরনের সুকুক বন্ড ছেড়ে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
আগামী মে মাসে প্রকল্পের বিপরীতে সুকুক ইস্যু করা হবে।
সুকুক হলো একটি ইসলামী আর্থিক পদ্ধতি। এটি অনেকটা ট্রেজারি বন্ডের মতো, তবে ইসলামী শরীয়াহর নীতিমালা অনুসারে মুনাফা দেওয়ার লক্ষ্যে এর কাঠামো তৈরি করা হয়। সুকুকে বিনিয়োগকারীরা মূলত প্রকল্প বা সম্পদে মালিকানা লাভ করেন এবং সেই প্রকল্প বা সম্পদ থেকে আয় লাভ করেন। সুকুকের বৈশিষ্ট্য হলো এটি সম্পদের প্রকৃত মালিকানা এবং আয় নিশ্চিত করে, যেখানে সুদের কোনো সংশ্লেষ থাকে না।
একটি শীর্ষস্থানীয় শরীয়াহ-ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের সরকারি ট্রেজারি বন্ডের মুনাফার হার বিবেচনা করে আসন্ন সুকুক বন্ডের মুনাফা নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। একটি প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি খাতের ঐ ব্যাংকার বলেন, "আসন্ন সুকুক বন্ডগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়াতে এগুলোর মুনাফার হার বর্তমানে প্রচলিত সরকারি ট্রেজারি বন্ডের মুনাফার হারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা উচিত।"
পঞ্চম সুকুক বন্ডের মুনাফার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই বন্ডগুলোর মুনাফা আগেরগুলোর তুলনায় কম ছিল।
ঐ ব্যাংকার জানান, এর আগে পাঁচ বছর মেয়াদী চতুর্থ সুকুক বন্ডের জন্য মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০.৪০ শতাংশ। কিন্তু পঞ্চম সুকুক বন্ডের মুনাফা ছিল ৯.২৫ শতাংশ।
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারি ট্রেজারি বন্ডের মুনাফার হার ক্রমাগত বাড়ছে। এর কারণ হলো, বেশিরভাগ ব্যাংকই সরকারের অনুমোদিত এসব ঝুঁকিবিহীন সিকিউরিটিজে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
নিলামের ফলাফল অনুযায়ী, দুই বছর মেয়াদী সরকারি ট্রেজারি বন্ডের কাট-অফ ইল্ড (সাধারণভাবে যা সুদের হার হিসেবে পরিচিত) আগের ১১.২০ শতাংশ থেকে বেড়ে মঙ্গলবার ১২.১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
- "Govt to issue Tk 20b Sukuk bond in May" — দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ১০ এপ্রিল ২০২৫। (ইংরেজি)
- "সড়ক উন্নয়নে আসছে ২ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড" — সময় সংবাদ, ১০ এপ্রিল ২০২৫
- "ইসলামী সুকুক ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য" — কালের কণ্ঠ, ১৬ নভেম্বর ২০২৪