Jump to content

Wn/bn/মেটা এআইয়ের স্বতন্ত্র অ্যাপ তৈরির কথা ভাবছে মেটা

From Wikimedia Incubator
< Wn | bn
Wn > bn > মেটা এআইয়ের স্বতন্ত্র অ্যাপ তৈরির কথা ভাবছে মেটা

শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

মেটা এআই শীঘ্রই স্বতন্ত্র একটি অ্যাপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, যা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের পাশাপাশি যুক্ত হবে।

এ বিষয়ে অবগত একাধিক সূত্রের মতে, কোম্পানিটি এ বছরের দ্বিতীয় এপ্রিল-জুনের মাঝে কোনো এক সময়ে মেটা এআই-এর জন্য একটি স্বতন্ত্র অ্যাপ চালু করার পরিকল্পনা করছে। এটি মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কৌশলের একটি বড় পদক্ষেপ। বছরের শেষ নাগাদ, ওপেনএআই এবং অ্যালফাবেটের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাড়িয়ে যেতে চান তিনি। যেহেতু এই প্রকল্পটি গোপনীয়, তাই তথ্যদাতারা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

মেটা এআই চ্যাটবট প্রথম চালু হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এটি একটি জেনারেটিভ এআই-চালিত ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, যা ব্যবহারকারীদের নির্দেশনা অনুযায়ী উত্তর দিতে পারে এবং ছবি তৈরি করতে পারে। এপ্রিল মাসে মেটা তাদের প্রধান অ্যাপগুলোর মধ্যে মেটা এআই-কে সংযুক্ত করে। তখন তারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জারের সার্চ অপশনটি সরিয়ে সেখানে এই চ্যাটবটকে যুক্ত করে।

এরপর থেকে মেটা এআই হয়ে উঠেছে জাকারবার্গের অন্যতম প্রধান মাধ্যম, যার মাধ্যমে তিনি তার কোম্পানির জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ব্যবহারকারীদের সামনে তুলে ধরছেন।

জানুয়ারিতে কোম্পানির অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের আয়-সংক্রান্ত আলোচনায় জাকারবার্গ বলেন, “এই বছরই উচ্চ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজনানুসারে কাজ করতে সক্ষম এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট ১ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে। আমি আশা করি মেটা এআই-ই হবে সেই শীর্ষস্থানীয় এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট।”

তবে চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি’র মতো অন্যান্য জেনারেটিভ এআই টুলের বিপরীতে মেটা এআই বর্তমানে শুধুমাত্র মেটার বিভিন্ন অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। যদিও মেটার বিশাল ব্যবহারকারী সংখ্যা ইতিমধ্যেই এই এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করতে পারছে, কিন্তু একটি স্বতন্ত্র অ্যাপ থাকলে ব্যবহারকারীরা আরও গভীরভাবে এর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানুয়ারিতেই থ্রেডস-এ এক ব্যবহারকারী লিখেছিলেন, মেটা এআই-এর জন্য একটি আলাদা মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা উচিত যাতে এটি স্মার্টফোন এবং রে-ব্যান মেটা স্মার্ট গ্লাসের মতো বিভিন্ন হার্ডওয়্যার প্ল্যাটফর্মে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে। এছাড়াও এটি ব্যবহারকারীদের কথোপকথনের ইতিহাস সংরক্ষণ ও পরিচালনা করতে সাহায্য করবে এবং ব্যক্তিগতকরণ ও কাস্টমাইজেশনের সুযোগ আরও বাড়াবে।

এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জাকারবার্গ একটি লাল "💯" ইমোজি দেন, যা সাধারণত সম্পূর্ণ সম্মতির প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়াও, ওপেনএআই ও মাইক্রোবাস যেমন চ্যাটজিপিটি ও কোপাইলটের উন্নত সংস্করণ ব্যবহারের জন্য মাসিক ফি নেয়, সেরকম সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক সেবা চালুর কথা ভাবছে মেটা।

জানুয়ারিতে মেটার আর্থিক প্রধান সুসান লি জানান, “আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যবহারকারীদের জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা তৈরি করা। তবে ভবিষ্যতে মেটা এআই থেকে আয় করার স্পষ্ট সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থপ্রদানের মাধ্যমে উন্নত রেকমেন্ডেশন এবং প্রিমিয়াম পরিষেবা চালু করা।”

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান এক্স (পূর্বের টুইটার) প্ল্যাটফর্মে মজার ছলে লিখেন, “ঠিক আছে, হয়তো আমরাও একটা সোশ্যাল অ্যাপ তৈরি করবো।”

সেরা এআই কোম্পানি হতে মেটার চেষ্টা

[edit | edit source]

জানুয়ারিতে বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলোচনার সময় সুসান লি জানান, মেটা এআই-এর মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ কোটিতে পৌঁছেছে যা আগের ডিসেম্বরে ৬০ কোটি ছিল।

তবে বিশ্লেষকরা মেটা এআই-এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা সরাসরি চ্যাটজিপিটি বা অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে তুলনা করতে পারছেন না, কারণ এটি এখনও স্বতন্ত্র অ্যাপ হিসেবে পাওয়া যায় না।

বিজনেস অব অ্যাপস-এর ডেটা বিষয়ক সম্পাদক ডেভিড কারি ডিসেম্বরে জানান, মেটা এআই-এর স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট মাসে এক কোটিরও কম ভিউ পায়। তার মতে, এই সংখ্যা বড় প্রতিযোগীদের (যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি) তুলনায় অনেক কম, এমনকি অ্যানথ্রোপিক-এর মতো মাঝারি পরিসরের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়েও নিচে।

লি আরও জানান, ভারত হলো মেটা এআই-এর সবচেয়ে বড় বাজার। জুলাইয়ে বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে মেটা এআই ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি, এবং এটি ব্যবহারকারীদের অ্যাপে ধরে রাখার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জানুয়ারিতে তিনি বলেন, হোয়াটসঅ্যাপের পরেই ফেসবুকে মেটা এআই ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি।

মেটা এআই-এর এই স্বতন্ত্র অ্যাপ চালুর পরিকল্পনাটির গুগল ও এলন মাস্কের এক্সএআই-এর সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার সঙ্গে মিল রয়েছে। গুগল এবং এক্সএআই উভয়েই সম্প্রতি তাদের ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট—জেমিনি এবং গ্রক—এর জন্য পৃথক অ্যাপ চালু করেছে।

নভেম্বরে গুগল ঘোষণা দেয় যে জেমিনি অ্যাসিস্ট্যান্টের জন্য আইওএস ব্যবহারকারীরা একটি আলাদা অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েডে আরও আগে থেকে (ফেব্রুয়ারি ২০২৪) উপলব্ধ ছিল। গত সপ্তাহে গুগল তাদের মোবাইল অ্যাপ থেকে জেমিনি ব্যবহারের সুবিধা সরিয়ে নেয় এবং ব্যবহারকারীদের জেমিনি ব্যবহার করার জন্য অ্যাপ স্টোর থেকে জেমিনি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে। জানুয়ারিতে, এক্সএআই তাদের গ্রক-এর জন্য একটি অফিসিয়াল আইওএস অ্যাপ ও একটি ওয়েবসাইট চালু করে, যা ইলন মাস্কের সামাজিক মাধ্যম এক্স-এর বাইরে এই ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্টের ব্যবহার প্রসারিত করেছে। তবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের এখনো অ্যাপে অ্যাক্সেস পেতে ওয়েটলিস্টে যোগ দিতে হচ্ছে।

সেন্সর টাওয়ার-এর স্টেট অব মোবাইল ২০২৫ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপ ডাউনলোডের দিক থেকে চ্যাটজিপিটি এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় জেনারেটিভ এআই অ্যাপ। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গুগলের জেমিনি, এরপর বাইটডান্সের-এর দুয়োবাও এবং মাইক্রোসফটের কোপাইলট।

সূত্র বলছে, জাকারবার্গ মেটা’র জেনারেটিভ এআই টিমের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন, যাতে মেটা এআই-কে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত চ্যাট অ্যাপ হিসেবে গড়ে তোলা যায়। তিনি চান বছরের শেষ নাগাদ এটি শীর্ষস্থানে পৌঁছাক।

মেটাতে কাজ করা একাধিক কর্মী জানান, এআই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে তারা সপ্তাহের সাত দিনই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

জানুয়ারিতে এক মেমোতে কর্মীদের উদ্দেশে জাকারবার্গ লেখেন, “মেটা বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রযুক্তি তৈরি করছে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্মার্ট গ্লাসকে পরবর্তী কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং সামাজিক মাধ্যমের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং বছর হতে চলেছে এবং আমাদের টিমে সেরা প্রতিভা থাকবে তা আমি নিশ্চিত করতে চাই।”

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা জোরদার বাড়ানোর অংশ হিসেবে সিইও মার্ক জাকারবার্গ ঘোষণা দিয়েছেন যে, মেটা তাদের এআই উদ্যোগ আরও এগিয়ে নিতে ৬৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে।

মেটা ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা লামাকন নামে একটি নতুন সম্মেলনের আয়োজন করবে, যেখানে ওপেন সোর্স এআই তৈরি সম্পর্কিত আপডেট শেয়ার করা হবে। মূলত, এই সম্মেলনের মাধ্যমে ডেভেলপারদের নতুন অ্যাপ ও পণ্য তৈরিতে সহায়তা করাই মেটার লক্ষ্য। লামাকন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯ এপ্রিল। এটির পরে ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর আয়োজিত হবে মেটার বাৎসরিক মেটা কানেক্ট সম্মেলন।


উৎস

[edit | edit source]