Wn/bn/গাজা উপত্যকা শাসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে মিশর
শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মিশর গাজা উপত্যকার শাসনভার নেওয়ার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাষ্ট্রদূত তামিম খাল্লাফ এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশটি এই প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যা দিয়েছে এবং বলেছে এটি মিশর ও আরব বিশ্বের দীর্ঘদিনের নীতির পরিপন্থী।
খাল্লাফ ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ায়ির লাপিদের এক প্রস্তাবের জবাবে এই বক্তব্য দেন। লাপিদ প্রস্তাব করেছিলেন যে, মিশর অন্তত আট বছর গাজার প্রশাসন পরিচালনা করতে পারে। বিনিময়ে আন্তর্জাতিক সাহায্যের মাধ্যমে মিশরের বৈদেশিক ঋণ কমানো হবে। লাপিদ আরও বলেছিলেন, এই কার্যক্রম ১৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
খাল্লাফ জোর দিয়ে বলেন, মিশরের দৃঢ় অবস্থান হলো ইসরায়েলকে সব দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে সরে যেতে হবে। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। তিনি গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের মধ্যে গভীর সংযোগের কথা তুলে ধরেন এবং জোর দিয়ে বলেন, এসব অঞ্চল অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।
লাপিদ দাবি করেন, তার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন। তিনি বলেন, মিশর অন্যান্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অঞ্চলটি পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। লাপিদের মতে, গাজার সমস্যা সমাধান করাই ইরানের বিরুদ্ধে একটি আঞ্চলিক জোট গঠনের মূল চাবিকাঠি।
লাপিদ এমন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন যেখানে ইসরায়েল, মিশর, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলো যুক্ত থাকবে। তবে তিনি এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি আরও দাবি করেন, মিশর অতীতে গাজার শাসন পরিচালনা করেছে, তাই আবারও তা করতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে মিশরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে সরাসরি আলোচনা করেননি, তবে অন্যান্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
লাপিদের পরিকল্পনায় বর্তমান যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা, সব বন্দিদের মুক্তি এবং গাজার বাইরের সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনী মোতায়েন রাখা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও তিনি প্রস্তাব করেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি রেজুলেশনের আওতায় মিশর গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে পারে এবং নিরাপত্তা ও বেসামরিক বিষয়গুলো পরিচালনা করতে পারে।
এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এটি একটি অস্থায়ী "ট্রাস্টি প্রশাসন" হবে, যা পরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে স্থানান্তরিত হবে, তবে এর আগে সংস্কার ও উগ্রবাদ দমন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে মিশরের নেতৃত্বে পুনর্গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যেখানে সৌদি আরব, আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্র-মিশর যৌথ বিনিয়োগ সহায়তা দেবে।
লাপিদের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, যদি গাজার বাসিন্দাদের জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্য নির্ধারিত থাকে, তবে তাদের সংগঠিত উপায়ে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও মিশরের দায়িত্ব থাকবে অস্ত্র পাচার রোধ করা, সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া। পরিকল্পনায় মিশর, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে।
লাপিদ গাজার জন্য একটি নিরাপত্তা মডেল হিসেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী ও সিনাই অঞ্চলে মিশরীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করেন।
মিশর সবসময় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে সমর্থন করেছে। দেশটি বিশ্বাস করে, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আসবে না। মিশর এর আগেও সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মিশর কখনোই ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার কোনো প্রস্তাব মেনে নেবে না।
উৎস
[edit | edit source]- "Egypt rejects any ideas involving Egyptian administration of Gaza" — ডেইলি নিউজ ইজিপ্ট, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। (ইংরেজি)
- "Egypt rejects proposal for it to run Gaza as ‘unacceptable’" — আরব নিউজ, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। (ইংরেজি)